সেই ‘অসম’ প্রেম টিকিয়ে রাখা সম্ভব হলো না, কেড়ে নিল মৃ’ত্যু

এক অসম প্রেমকে ‘সম’ করেছিলেন, সমতায় নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মৃত্যু তৈরি করে দিল দুজনার পথ। একজন না ফেরার দেশে আরেকজন রইলেন পড়ে জগতে।

সত্য রঞ্জন রক্ষিত ও কাঞ্চির এই প্রেম ছিল মুখে মুখে, তাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় শোক ছড়িয়ে পড়েছে শুভাকাঙ্ক্ষীদ্দের মনের আকাশে। সত্যজিত আর কাঞ্চির প্রেম আলাদা করে দিল একটি মৃত্যু। না ফেরার দেশে চলে গেলেন কাঞ্চি।

সত্য রঞ্জন রক্ষিত একজন গায়ক। লেখালেখি করেন, ২০১৪ সালে বইও বেরিয়েছে। ছবিও আঁকেন। ‘কুয়াশা মূর্খ’ হিসেবেরি পরিচিত তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেসবুকের মাধ্যমেই একদিন পরিচয় হয় কাঞ্চির সঙ্গে। সেটাও ৭ বছর আগে। কাঞ্চি স্লোভেনিয়ার নাগরিক। তার পুরো নাম ওলগা জেহাফ। দুজনের বয়সের ব্যবধান অনেক।

সত্য রঞ্জন রক্ষিত ২০১৬ সালে একটি স্ট্রিট শো করতে ভারতের কেরালায় যান। স্লোভেনিয়া থেকে সেখানে আসেন কাঞ্চি। এই তাদের প্রথম দেখা। এরপর দুজন মিলে ঘুরে বেড়িয়েছেন ভারতের বিভিন্ন অঙ্গ রাজ্যে, ভারতের বিভিন্ন শহরে।

দুই বছর আগে বাংলাদেশে আসেন কাঞ্চি। এরপর গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিয়ে করেন সত্য ও কাঞ্চি। সময়টা ভালোই কেটে যাচ্ছিল। পটুয়াখালীতে নিজের গ্রামের বাড়িতে ‘মহানন্দালয়’ নামে একটি খামার প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হন সত্য।

দুজন মিলে সেখানে কৃষিপণ্য উৎপাদনে মনোযোগী হন। এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন কাঞ্চি। প্রথমে তার হৃদযন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়। গতমাসে ভর্তি করা হয় ঢাকার হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে।

সেখানে প্রায় এক মাস ধরে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন কাঞ্চি। এবার তার কিডনিতেও সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। হৃদরোগ হাসপাতাল থেকে বক্ষব্যাধি হাসপাতালে তাকে স্থানান্তরের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

স্ত্রীর দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। ফেসবুকে জানালেন তার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য রাস্তায় রাস্তায় গান গাইবেন। ফেসবুকে চিঠি লিখলেন প্রধানমন্ত্রী বরাবর। সত্যর ডাকে সাড়া দিল দেশের অনেক তরুণ। কলকাতার কলেজ স্ট্রিট, বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে প্রেমিকার জন্য গান গাইলো সমব্যাথীরা।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে গতকাল একটি ছবি পোস্ট করেন সত্য রঞ্জন। লিখেন, ‘প্রেমের বর্তমান অবস্থান পোস্ট সিসিইউ’র আঙিনায়, আইসিইউ’র অপেক্ষায়। ফাঁকা বা ছেঁড়া পকেটের এই জাতি-ধ’র্ম, বর্ণ-গোত্র, ভাষা তথা প্রথা’র ঊর্ধ্বে থাকা প্রেম, সর্বাঙ্গে ফুলের মতো কাঁদামাখা ভালবাসা আর সর্বশক্তিতে জড়িয়ে ধরা মায়ার গন্তব্য কোথায় জানিনা। এতো মানুষের মহৎ হৃদয়ের ডাক, প্রকৃতি নিশ্চয়ই উপেক্ষা করতে পারবেনা।

রে ভালোবাসা! জেগে ওঠ, নইলে আমাকেও তোর সঙ্গী কর নিশ্চিন্তের ঘুমবাজারে। জয় আকাঙ্ক্ষা…’সত্য রঞ্জনের শুভাকাঙ্ক্ষী নিয়াজ বিপ্লব বলেন, ‘কাঞ্চির নানা রকম সমস্যা ছিল। ফুসফুসে পানিও জমেছিল। তার চিকিৎসার জন্য বিভিন্নভাবে আর্থিক সহায়তাও এসেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গেল না তাকে। মরদেহ ভোরে পোস্তগোলা শ্মশানে নিয়ে আসা হয়েছিল। দাহ সম্পন্ন হয়েছে, আমরা ফিরে যাচ্ছি।’

আব্দুল মোমিন নামের একজন সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘যারা উনাকে অনেকদিন ধরেই চেনে তারা জানে ছেলেটা আর ১০ টা সাধারণ মানুষের মত নয়। তার জীবন যাপন, চিন্তাধারা অন্য ধরনের।তাই হয়তো তার প্রেমটাও ছিলো গতানুগতিক ধারার বাইরে। একজন ২৬/২৭ বছরের মানুষ প্রেমে পড়লেন প্রায় ৭০ বছরের একজনের সাথে সে বিদেশিনী, যারা তাদের প্রেম নিজের চোখে দেখেছে তারা জানে স্বয়ং বিধাতা যেন তাদের এক করে দিয়েছিলো। দেশ, জাতি, ধ’র্ম, বর্ন, ভাষা সব ছিলো আলাদা শুধু তাদের একজন আরেকজনকে প্রবলভাবে আগলে রাখার চেষ্টাটা ছিলো একমাত্র লক্ষ্য।’